S-500 Air Defense System : ভারতের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে আরেকটি গর্বের অধ্যায় যোগ হতে চলেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের গোপন প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মধ্যে ভারত সফলভাবে S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসছে আরও বড় এক প্রস্তাব—বিশ্বের সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম S-500 ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা।
এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হলে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শুধু যে আরও আধুনিক হবে তা-ই নয়, এটি হবে এমন এক ধরণের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি যা বিশ্বের গুটি কয়েক দেশের কাছেই সীমিত রয়েছে। ভারত এর ফলে নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের তালিকায় যুক্ত করতে পারবে। আর এই পদক্ষেপ কার্যত চিন ও পাকিস্তান—দুই প্রতিবেশী দেশের জন্যই সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়াবে।
রাশিয়ার তৈরি S-400 সিস্টেম ইতিমধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে রয়েছে। এই সিস্টেম বিভিন্ন ধরণের আকাশপথে আসা হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়তে সক্ষম। ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল, যুদ্ধবিমান—সব কিছুকেই লক্ষ্য করে ধ্বংস করতে পারে এই সিস্টেম। তবে S-500 হলো এর আরও উন্নততর সংস্করণ। এটি শুধুমাত্র বিমান বা ড্রোনই নয়, হাইপারসনিক মিসাইল পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে, এমনকি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের স্যাটেলাইট-লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম।
[Project Kusha] নামেও একটি ভারতীয় আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার লক্ষ্য দেশীয় প্রযুক্তিতে S-400 এর সমমানের একটি সিস্টেম তৈরি করা। কিন্তু তাতে অনেক সময় লাগতে পারে। ঠিক এই সময় রাশিয়ার তরফ থেকে S-500 নিয়ে যৌথ উৎপাদনের প্রস্তাব ভারতকে আরও দ্রুত আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে পাওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে।
রাশিয়ার এমন প্রস্তাব শুধু প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ককেও এক নতুন মাত্রা দিতে পারে। যদি ভারত এই প্রযুক্তির যৌথ উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে ভবিষ্যতে দেশীয় উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে। যা হবে ভারতের প্রতিরক্ষা অর্থনীতির জন্য এক বড় অগ্রগতি।
পাকিস্তান ইতিমধ্যে ভারতের S-400 ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষত, অপারেশন সিন্দুরের পর তারা সীমান্তে সেনা মোতায়েন এবং কূটনৈতিক বার্তা আদান-প্রদানে বেশ সক্রিয় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত যদি S-500 সিস্টেম নিজেদের হাতে নিয়ে ফেলে, তাহলে পাকিস্তানের পক্ষে আকাশপথে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
চিনও ভারতের প্রতিরক্ষা উন্নয়নকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি HQ-19 নামের একটি প্রতিরক্ষা সিস্টেম থাকলেও, S-500 এর মতো পরিসর ও সক্ষমতা তাদের সিস্টেমে নেই। ফলে ভারত এই প্রযুক্তি পেলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি শক্তিশালী সামরিক ভারসাম্য গড়ে তুলতে পারবে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, S-500 এর প্রযুক্তিগত দিক যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর কৌশলগত উপস্থিতিও বড় ভূমিকা রাখে। এই সিস্টেম মোতায়েন করা মানে—শত্রুপক্ষ জানবে যে তাদের কোনো মিসাইল কিংবা ড্রোন ভারতের আকাশসীমায় ঢুকতে পারবে না। যুদ্ধ ছাড়াও এই ধরনের প্রস্তুতি একধরণের মনস্তাত্ত্বিক দমন ক্ষমতা তৈরি করে।
ভারত যদি S-500 নিয়ে আগ্রহী হয়, তবে আগামী কিছু মাসের মধ্যেই চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে পারে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মান আরও অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে। শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, এই ধরণের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি গঠনে ভারতের অংশগ্রহণ দেশকে ভবিষ্যতের যুদ্ধ-প্রস্তুত দেশের তালিকায় নিয়ে আসবে।
এই চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি, তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি অনুযায়ী, রাশিয়ার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে এবং ভারত প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, রাশিয়ার তরফে আসা এই S-500 প্রস্তাব ভারতকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে এক নতুন যুগে নিয়ে যেতে পারে। S-400 এর সফল ব্যবহার ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছে যে ভারত এই ধরনের উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী। আর যদি S-500 সত্যিই ভারতের হাতে আসে, তাহলে বলা চলে, আকাশেই নয়—কৌশলগত পরিসরেও শত্রুর নাগালের বাইরে পৌঁছে যাবে ভারত।
বি. দ্র.
এই প্রতিবেদন বিভিন্ন উন্মুক্ত সূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। সরকারি বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দিষ্ট ঘোষণার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে।