Blog Post

train-name-process-how-train-names-decided

Train Name Process : কীভাবে নির্ধারিত হয় ভারতীয় ট্রেনের নাম? রইল নামকরণের পদ্ধতি

Train Name Process : ভারতের প্রতিদিনের যাত্রাপথে ট্রেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে গতিতে ভারতীয় রেল উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে, তাতে একে ‘দেশের লাইফলাইন’ বলা মোটেই বাড়াবাড়ি নয়। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী ট্রেনে চেপে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করেন। লোকাল, এক্সপ্রেস, সেমি হাই-স্পিড, বিলাসবহুল—প্রতিটি ধরণের ট্রেনই যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবা দিয়ে থাকে। তবে ট্রেনের নাম শুনলেই বুঝে ফেলা যায় তার ধরন ও গন্তব্য। এই ট্রেনগুলির নাম রাখা হয় কীভাবে, জানেন কি? এ যেন এক বিশদ প্রক্রিয়া—যা শুধুমাত্র রেল কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই সম্ভব।

এখানে মূল বিষয় হচ্ছে প্রতিটি ট্রেনের নামকরণের পেছনে থাকে কোনও না কোনও ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক বা ভৌগলিক তাৎপর্য। Indian Railways-এর তরফে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ট্রেনের নাম স্থির করা হয় (Train Name Process)। রেলওয়ে বোর্ড এই কাজের দায়িত্বে থাকে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রস্তাব খতিয়ে দেখে, সব দিক বিচার করে ট্রেনের নাম নির্ধারণ করে।

যেমন ধরুন ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’-এর কথাই যদি বলা যায়, তাহলে বোঝা যায়, এই ট্রেন দিল্লি তথা দেশের রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে ছাড়ে এই ট্রেন, যার গন্তব্য দিল্লি। এই কারণেই এই ট্রেনের নাম ‘রাজধানী’। একইভাবে ‘বিকানের এক্সপ্রেস’ নামটি এসেছে রাজস্থানের বিকানের শহরের নাম অনুসারে। অর্থাৎ, কোন ট্রেন কোন অঞ্চল বা শহরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তার ভিত্তিতে সেই ট্রেনের নাম নির্ধারিত হয়।

১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চালু হয় ‘শতাব্দী এক্সপ্রেস’। শতাব্দী মানে ১০০ বছর, আর সেই মাহাত্ম্যকে স্মরণ করতেই রেল এই ট্রেনের নামকরণ করে শতাব্দী। আবার ‘দুরন্ত এক্সপ্রেস’ হল এমন এক ট্রেন যা খুব কম স্টেশনে দাঁড়ায় এবং দ্রুত গতির জন্য বিখ্যাত। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘দুরন্ত’, যার মানেই হল বাধাহীন দ্রুতগামী।

অঞ্চলভিত্তিক নামেরও প্রচলন রয়েছে Indian Railways-এ। যেমন, ‘গোদাবরী এক্সপ্রেস’ চলাচল করে সেইসব এলাকা দিয়ে, যা বিখ্যাত গোদাবরী নদীর কাছাকাছি। অর্থাৎ, ট্রেনের নামকরণে ভৌগলিক সংযোগ একটি বড় ভূমিকা রাখে। রেলের তরফে যখন কোনও নতুন ট্রেন চালু হয়, তখন সংশ্লিষ্ট রেল জোন ও রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে তার নাম চূড়ান্ত করা হয়। রেলওয়ে বোর্ড এই পুরো প্রক্রিয়ার তদারকি করে এবং বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শ নিয়ে তবেই ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়াও কোনও বিশেষ দিন, ব্যক্তিত্ব বা ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণেও ট্রেনের নামকরণ হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ‘নেহরু এক্সপ্রেস’, ‘গান্ধী এক্সপ্রেস’ ইত্যাদি ট্রেনের নাম রাখা হয়েছে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম অনুসারে, যাতে তাদের অবদান স্মরণে রাখা যায়। আর এক্ষেত্রেও (train naming system) অনুযায়ী ইতিহাস ও সমাজচিন্তাকে গুরুত্ব দেয় রেল।

এইভাবে দেখা যায়, ট্রেনের নামকরণ শুধু যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে নয়, বরং দেশের ইতিহাস, ভৌগলিকতা, সংস্কৃতি ও স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত রেখে তা করা হয়। এবং প্রতিটি নামের পেছনে থাকে ভাবনা, পর্যালোচনা ও সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। সাধারণত রেলওয়ে বোর্ড দেশের সমস্ত রেল জোন থেকে প্রস্তাব চেয়ে পাঠায়, তারপর সেইসব প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই প্রতিটি ট্রেনের নামের পেছনে গাঁথা থাকে গল্প, স্মৃতি ও অর্থ।

এই নামকরণের ফলে ট্রেনগুলোর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়, যাত্রীরাও সহজে বুঝতে পারেন কোন ট্রেন কোথা থেকে কোথায় যায়, এবং কী ধরনের পরিষেবা নিয়ে আসে। তাই শুধু একটি নাম নয়, ট্রেনের নাম একপ্রকার জাতীয় পরিচয়ের প্রতীকও বটে।

প্রযুক্তি ও পরিষেবার পাশাপাশি এই ধরণের যত্নশীল নামকরণ রেল ব্যবস্থাকে আরও নির্ভরযোগ্য ও ভাবনাসমৃদ্ধ করে তোলে। ভবিষ্যতেও Indian Railways এই ধারা বজায় রেখে নতুন ট্রেনের নাম ঠিক করবে, যা শুধু পথ নয়, অতীত ও ঐতিহ্যও বহন করে চলবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *