Bathroom Bucket Vastu : বাস্তুশাস্ত্র একটি প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান, যা ঘরের প্রতিটি দিককে জীবনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাখ্যা করে। অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র ঘরের দিক, দরজা-জানালার অবস্থান বা রান্নাঘরের স্থানই বাস্তু অনুযায়ী বিচার্য। কিন্তু বাস্তবে এমন নয়। ঘরের প্রতিটি ছোট জিনিস, এমনকি বাথরুমে ব্যবহৃত বালতির রঙও বাস্তুর সঙ্গে যুক্ত এবং তার প্রভাব আমাদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুল রঙের বালতি ব্যবহার করলে আর্থিক ক্ষতি, সম্পর্কের টানাপোড়েন, এমনকি স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আর সঠিক রঙের বালতি ব্যবহার করলে জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বজায় থাকে।
অনেক সময় আমরা বাথরুমের সৌন্দর্য বাড়াতে রঙিন বালতি কিনে থাকি। কিন্তু এর পেছনে কোন বাস্তু বিচার করি না। উদাহরণস্বরূপ, অনেকেই লাল রঙের বালতি পছন্দ করেন কারণ এটি উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় দেখায়। কিন্তু বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী লাল রঙ বাথরুমের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। লাল রঙকে অগ্নি তত্ত্বের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, এবং এটি যদি জলতত্ত্বের স্থানে অর্থাৎ বাথরুমে থাকে, তাহলে তা ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এর ফলে ঘরে অশান্তি, মানসিক উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
একইভাবে কালো রঙের বালতি বাস্তুশাস্ত্রের দৃষ্টিতে অত্যন্ত অশুভ। কালো রঙ অন্ধকার, দুঃখ ও নেতিবাচক শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বাথরুমে কালো রঙের বালতি রাখলে নেতিবাচক শক্তির প্রবাহ বাড়ে এবং বাস্তু দোষ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ঘরের মানুষজনের মধ্যে হতাশা, মানসিক চাপ এবং অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এমনকি অনেক সময় পরিবারে অকারণ ঝামেলা ও বিরোধও বাড়তে পারে।
বাস্তু বিশেষজ্ঞরা বরং নীল রঙের বালতির পরামর্শ দেন। নীল রঙ শান্তি, স্থিরতা ও শীতলতার প্রতীক। বাথরুমের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত রঙ। নীল রঙের বালতি ব্যবহার করলে বাস্তু অনুযায়ী জীবনে শান্তির আবাহন ঘটে, মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে এবং আর্থিক স্থিতিও ভালো হয়। অনেক বাস্তু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, যদি বাথরুমে কোনো বাস্তু দোষ থেকে থাকে, তবে নীল বালতির উপস্থিতি তা অনেকটাই প্রশমিত করতে পারে।
সবুজ রঙের বালতিও বাস্তুতে শুভ বলে ধরা হয়। সবুজ প্রকৃতির রঙ, যা নবজীবন, বৃদ্ধি ও সুস্থতার প্রতীক। বাথরুমে সবুজ বালতি রাখলে মানসিক প্রশান্তি বাড়ে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। সাদা রঙের বালতি রাখাও বাস্তুর দিক থেকে ভালো সিদ্ধান্ত। সাদা রঙ শান্তি, স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ঘরের পরিবেশকে পজিটিভ করে তোলে।
এই বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বালতির অবস্থান ও পরিচ্ছন্নতা। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, বাথরুমের উত্তর-পূর্ব কোণটি সবচেয়ে শুভ স্থান, যেখানে বালতি রাখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে বালতির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি। নোংরা বা ভাঙা বালতি ব্যবহার করা বাস্তু দৃষ্টিতে অশুভ, যা ঘরে রোগ-শোক ও দুর্ভাগ্য ডেকে আনতে পারে। প্রতিদিন বালতি পরিষ্কার রাখা এবং পানির সংরক্ষণে সতর্ক থাকা বাস্তু দোষ কমানোর একটি কার্যকর উপায়।
অনেক বাস্তু উপদেষ্টার মতে, ধাতব বালতি (যেমন স্টিল বা তামা) ব্যবহার করা প্লাস্টিকের তুলনায় বেশি শুভ। বিশেষত, স্টিলের বালতি যদি নীল বা সাদা রঙে রঙিন হয়, তবে তা বাস্তু মতে সর্বোচ্চ উপযোগী। তবে প্রাকটিকাল দিক থেকেও ধাতব বালতি বেশি টেকসই ও স্বাস্থ্যসম্মত। এর বাইরে, যদি কারও বাথরুমে ইতিমধ্যেই বাস্তু দোষ থাকে এবং তারা তা পরিবর্তন করতে না পারেন, তাহলে কিছু বাস্তু প্রতিকার অনুসরণ করতে পারেন।
যেমন, বাথরুমে নিয়মিত গঙ্গাজল ছিটানো, একটি কাচের পাত্রে নুন রেখে তা প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন করা, সুগন্ধি বা ধূপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। এই সব ছোট ছোট বাস্তু প্রতিকারের মাধ্যমে ঘরের নেতিবাচকতা অনেকটা কমানো যায় এবং পরিবারে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বহু মানুষ আধুনিক ইন্টেরিয়রের খোঁজে বাস্তুশাস্ত্রকে অবহেলা করছেন। অথচ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক বাস্তু মেনে চললে জীবনের বহু জটিলতা এড়ানো যায়। ঘর সাজানোর সময় শুধুমাত্র রূপের দিকে নয়, উপকারিতার দিকেও নজর দেওয়া উচিত। বিশেষ করে এমন ঘর, যেখানে জল প্রবাহ ও নিঃসরণ হয়— যেমন বাথরুম— সেখানে বাস্তু মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে বালতির রঙ একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী দিক।
সবশেষে বলা যায়, আমরা অনেক সময় অজান্তেই এমন কিছু ব্যবহার করি যা বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাথরুমে ব্যবহৃত বালতির রঙ তার একটি উদাহরণ। তাই আজই একবার দেখে নিন আপনার বাথরুমে রাখা বালতির রঙ কী বলছে। যদি তা লাল বা কালো হয়, তবে আজই তা বদলে ফেলুন এবং ব্যবহার করুন নীল, সাদা বা সবুজ রঙের বালতি। এই ছোট পরিবর্তন হয়তো আপনার জীবনে এনে দিতে পারে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন।
বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি বাস্তুশাস্ত্রভিত্তিক তথ্য ও উপদেশ নিয়ে তৈরি। ব্যক্তিগত সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম।